ক্যারাম খেলার অজানা কিছু নিয়মকানুন

ঘরোয়া খেলা বা ইনডোর গেমসের মধ্যে ক্যারাম বোর্ড অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা। শহর এবং গ্রামের সর্বস্তরেই এ খেলার প্রচলন রয়েছে। ফলে আমাদের দেশের অধিকাংশ ছেলে মেয়েই ক্যারাম খেলায় পারদর্শী। কেবলমাত্র ছেলে মেয়ের মধ্যেই এ খেলার প্রচলন সীমাবদ্ধ নয়। বয়স্ক এবং প্রবীণদের কাছেও ক্যারাম খেলার জুড়ি নেই। স্বল্প খরচে এমন একটা ভাল খেলা আর নেই। তাছাড়া জায়গা বা প্লেয়িং এরিয়াও কম প্রয়োজন হয় বলে অনেকে ঘরে স্ত্রী, পুত্র কন্যা নিয়ে অবসরে ক্যারাম খেলে থাকেন।

poat-image

তাছাড়া ক্যারাম খেলতে খেলোয়াড়ের সংখ্যা প্রয়োজন হয় কম। দুই বা চারজন খেলোয়াড় হলেই এ খেলা সম্ভব। সিঙ্গেল খেলায় প্রত্যেক দলে একজন করে দুই দলে দুইজন এবং ডবল খেলায় প্রত্যেক দলে দুইজন করে চারজন খেলোয়াড় একসাথে খেলতে পারে। তাছাড়া খেলার সরঞ্জাম ও খুব বেশি দরকার হয় না। সরঞ্জাম বলতে একটি বোর্ড ১৯ টি গুটি এবং একটি স্ট্রাইকার প্রয়োজন হয়। ক্যারাম খেলা আমাদের দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং ব্যাপক প্রচলিত হলেও দুঃজনকভাবে বলতে হয় আমাদের দেশে ক্যারামের কোন ফেডারেশন নেই। অথচ ক্যারামের চেয়ে অনেক কম জনপ্রিয় এবং কম পরিচিত অনেক খেলারই ফেডারেশন রয়েছে। আর ফেডারেশন না থাকায় এ খেলার সঠিক নিয়ম-কানুনও প্রচলিত নেই। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লাব-সমিতি, পাড়ায়, মহল্লায় এ খেলার প্রতিযোগীতামূলক টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। আর ফেডারেশন না থাকায় এসব প্রতিযোগীতা স্থানীয় নিয়মে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আর তাতে অনেক সময় বিপত্তি ঘটতে দেখা যায়।

poat-image

আগেই বলা হয়েছে ক্যারাম খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থকে দুইজন বা চারজনের মধ্যে। দুইজনের মধ্যে অনুষ্ঠিত খেলাকে বলা হয় ’সিঙ্গেল খেলা এবং চারজনের মধ্যে অনুষ্ঠিত খেলাকে বলা হয়’ডবল খেলা সিঙ্গেল খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বি খেলোয়াড় দাঁড়াবেন মুখোমুখি। এবং ডবল খেলায় প্রত্যেক জুটি দাঁড়াবেন মুখোমুখি।

poat-image

যদিও আন্তজার্তিক ক্যারাম ফেডারেশনের রুলস্ বুকে ক্যারামের সাইজের একটা পরিমাপ রয়েছে তবে আমাদের দেশে বিভিন্ন সাইজের বোর্ড দেখা যায়। নির্ধারিত মাপের চেয়ে বড় এবং ছোট বোর্ড ও রয়েছে।

poat-image

(১) ক্যারাম বোর্ডের ’উপরিভাগ’

ক্যারাম বোর্ডের উপরিভাগ প্লাইউডের বা অন্য কোন কাঠের তৈরি হবে। এই প্লাইউড বা কাঠ হতে হবে সমতল ও খুবই মসৃন এবং কমপক্ষে ৮ মিলিমিটার পুরু। এাঁ বর্গাকার এবং প্রতিবাহুর দৈর্ঘ্য সর্বনিম্ন ৭৩.৫০ সেন্টিমিটার এবং সর্বোচ্চ ৭৪ সেন্টিমিটার হবে। এর উপরিভাগ এতই মসৃণ যে, ১৫ গ্রাম ওজন বিশিষ্ট একটি স্ট্রাইকার দিয়ে উল্টো দিকের কাঠের ফ্রেমে অত্যন্ত জোরে আঘাত করলে ’স্টাইকার দিয়ে উল্টো দিকের কাঠের ফ্রেমে অত্যন্ত জোরে আঘাত করলে ’স্ট্রাইকার কমপক্ষে ৩ ১/২ বার এপার ওপার আসা যাওয়া করবে।

(২) ক্যারাম বোর্ডের  ফ্রেইম বোর্ডের উপরিভাগের চারদিক রোজউড বা অন্য কোন শক্ত কাঠ দ্বারা আটকে দিতে হবে। এই কাঠ হবে ’সিনজড’ অর্থাৎ ঠান্ডা বা গরমে যেন ফেটে বা বেঁকে না যায়। কাঠের ফ্রেম ৬.৩৫ সেন্টিমিটারের কম বা ৭.৬০ সেন্টিমিটারের বেশি চওড়া হবে না এবং এর চার কোনা বাঁকা হবে। বোর্ডের উপরিভাগ থেকে ফ্রেমের উচ্চতা সর্বনি¤œ ১.৯০ সেন্টিমিটার এবং ২.৫৪ সেন্টিমিটারের মধ্যে হবে। বোর্ডেও উপরিভাগ সমতল রাখার জন্য এর নিচে ক্ষুদ্রাকার চৌ-কোণা ফ্রেম সংযুক্ত করতে হবে।

poat-image

(৩) পকেট: বোর্ডেও চার কোণায় ৪টি গোলাকার ’পকেট’ থাকবে। প্রতিটি পকেটের ব্যাস হবে ৪.৪৫ সেন্টিমিটার। পকেটের ব্যাস বড় জোর ০.১৫ সেন্টিমিটার। পকেটের ব্যাস বড় জোর ০.১৫ সেন্টিমিটার বড় করা যেতে পারে। বোর্ডেও চার কোণায় ফ্রেইমের সাথে সংযুক্ত প্রইাউড কেটে এই পকেট তৈরি করতে হবে।

(৪)বোর্ডের ’বেইস লাইন: অ. বোর্ডের প্রত্যেক পার্শ্বের ফ্রেমের সাথে সমান্তরাল করে বোর্ডের উপরিভাগে ৪৭ সেন্টিমিটার দীর্ঘ কালো রং এর দুটি করে সরল রেখা টানা হবে। এই দুটি রেখার বা লাইনের নিচেরটি ০.৫০ সেন্টিমিটার থেকে ০.৬৫ সেন্টিমিটার চওড়া হবে এবং ফ্রেম থেকে ১০.১৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে থাকবে। বেইস লাইনের নিচ থেকে অপর সরু লাইন পর্যন্ত মাঝখানের দূরত্ব হবে ৩.১৮ সেন্টিমিটার।

আ. ’বেইস লাইনের’ উভয় প্রান্তে একটি করে বৃত্ত আঁকা হবে। এই বৃত্তের ব্যাস হবে ৩.১৮ সেন্টিমিটার। এই বৃত্তের মধ্যে ২.৫৪ সেন্টিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট জায়গাটি লাল রং এর হবে। এই বৃত্ত বা সার্কেল গুলোকে ’বেইস সার্কেল’ বলে। এই বৃত্ত এমনভাবে আঁকতে হবে যাতে বেইস লাইনের উভয় প্রান্তকে স্পর্শ করে। তাছাড়া এক পাশের ’বেইস সার্কেল’ থেকে অপর পার্শ্বেও ’বেইস সার্কেলের’ মাঝখানের দূরত্ব হবে ১.২৭ সেন্টিমিটার।

(৫)বোর্ডের কোণ আংকিত তীর: ০.১৫ সেন্টিমিটার চওড়া কাল রং এর চারটি তীর ক্যারাম বোর্ডের প্রতি কোণে পকেটের মাঝ বরাবর নিশান করে আঁকতে হবে। এই তীর দু’দিকের দু’টি বেইস সার্কেলের মাঝখানের খালি জায়গার মধ্য দিয়ে পার হয়ে যাবে এবং পকেট থেকে ৫.০০ সেন্টিমিটার দূরে থাকবে। প্রতিটি তীরের দৈর্ঘ্য ২৬.৭০ সেন্টিমিটারের বেশি হবে না। তীরের পিছন ভাগে ৬.৩৫ সেন্টিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট একটি করে সুন্দর অর্ধবৃত্ত থাকতে পারে।

(৬)সেন্টার সার্কেল: বোর্ডের উপরিভাগের কেন্দ্র বিন্দুতে ৩.১৮ সেন্টিমিটার ব্যাসের কাল রেখা বিশিষ্ট একটি বৃত্ত থাকবে। এই বৃত্তটি লাল রং দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। একে ’সেন্টার সার্কেল’ বলে।

(৭)’আউটার সার্কেল বা বর্হিবৃত্ত:

(ক)বোর্ডেও কেন্দ্র বিন্দু থেকে ১৭.০০ সেন্টিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট আরেকটি বৃত্ত থাকবে। একে ’আউটার সার্কেল’ বলে। এই আউটার সার্কেল বিভিন্ন নকশা দ্বারা চিত্রিত করা যেতে পারে।

poat-image

() ক্যারাম ঘুঁটি

 ক্যারাম খেলার ঘুঁটি ভাল মানের কাঠের তৈরি ও গোলাকার হবে। ঘুঁটির ব্যাস ৩.১৮ সেন্টিমিটারের        বেশি কিংবা ৩.০২ সেন্টিমিটারের কম হবে না এবং পুরু হতে হবে ০.৭০ সেন্টিমিটার থেকে ০.৯০ সেন্টিমিটারের মধ্যে। ঘুঁটির প্রান্ত হবে গোলাকার এবং মসৃণ। প্রতিটি ঘুঁটির ওজন ৫.০০ গ্রামের নিচে অথবা ৫.৫০ গ্রামের উপরে হবে না।

ক্যারাম খেলার ঘুঁটি হবে ৯টি সাদা, ৯টি কাল এবং ১ টি লাল রং এর যাকে রেড বলে। প্রত্যেকটি ঘুঁটি আকাওে আয়তনে ও ওজনে একই রূপ হবে। ষ্ট্রাইকার দিয়ে বোর্ডে উপরে ঘুঁটিতে আঘাত করলে ঘুঁটিগুলি সাবলিল গতিতে চলতে হবে।

(গ) ষ্ট্রাইকার

 ক্যারাম খেলার ষ্ট্রইকার হবে গোলাকার ও মসৃণ এবং ব্যাস ৪,১৩ সেন্টিমিটার ও ওজন ১৫ গ্রামের বেশি হবে না। ধাতব পদার্থ ছাড়া অন্য যে কোন পদার্থ দিয়ে ষ্ট্রাইকার তৈরি হতে পারে। সুদৃশ্য নকশা কাটা ষ্ট্রাইকারও ব্যবহৃত হতে পারে তবে তা উপরের বর্ণনা অনযায়ী তৈরি হতে হবে।

(ঘ) বোর্ড রাখার টেবিল বা ষ্ট্যান্ড

 যে টেবিল বা ষ্ট্যান্ডের উপর বোর্ড রেখে ক্যারাম খেলা হবে তা উচ্চতায় ৬৩.০০ সেন্টিমিটারের কম এবং ৭০ সেন্টিমিটারের বেশি হবে না। ষ্ট্যান্ডের উপর বোর্ড বসানোর পর বোর্ডেও কোন পার্শ্ব বা নিচু এবং নড়াচড়া করবে না। ষ্ট্যান্ডের উপর বোর্ডটি স্থিরভাবে স্থাপন করতে হবে।

(ঙ) টুল বা চেয়ার

যে টুল বা চেয়ারের উপর বসে খেলোয়াড় ক্যারাম খেলবে তার উচ্চতা ৪০.০০ সেন্টিমিটারের কম এবং ০ সেন্টিমিটারের বেশি হবে না। তবে হাতল ছাড়া চেয়ার ব্যবহার করতে হবে।

poat-image

(চ) পাউডার

 ক্যারাম খেলার জন্য উন্নতমানের পাউডার ব্যবহার করতে হবে যাতে বোর্ডের উপরিভাগ মসৃণ ও শুকনো থাকে। কৌঁটা থেকে পাউডার ব্যবহার করলে তা বোর্ডে সর্বত্র সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।

(ছ) নেট

 ক্যারাম বোর্ডে প্রত্যেক পকেটের নিচে নেট লাগিয়ে নিতে হবে যাতে ঘুঁটি পকেটে পড়লে নেটে গিয়ে জমা হতে পারে। ১০ টি ঘুঁটির জায়গা হয় এমন বড় নেট লাগাতে হবে।

(জ) লাইট

 ক্যারাম বোর্ডের উপর সুবিধাজনক আলোর জন্য বাল্বের ক্ষমতা ৬০ অথবা ১০০ ওয়াটের হতে পারে। তবে আলো যেন কোনভাবেই খেলোয়াড়ের চোখে না লাগে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

আপনি কি সাহায্য পেয়েছেন

সকল মন্তব্য

মন্তব্য করতে লগইন করুন নিবন্ধন করুন