ভাস্কো দা গামা ইউরোপীয়দের ভারতে আগমনের জলপথ আবিস্কার

বহু প্রাচীনকাল হতে জলপথ দিয়ে ইউরোপের সাথে ভারতের সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ইউরোপের সাথে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত লাভজনক। নামকরনের ইতিহাস এর প্রধান কারণ ছিল ইউরোপে এশিয়ার পন্য- সামগ্রীর বিপুল চাহিদা বিশেষ করে এলাচ, মরিচ প্রভৃতি মশলার। কিন্তু ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দ তুর্কীরা যখন এশিয়া মাইনর ও কনস্টান্টিনোপল পূর্ব রোম সাম্রাজ্যের রাজধানী যখন করে তখন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে যে সকল প্রাচীন বানিজ্য পথ ছিল তা তুর্কিদের নিয়ন্ত্রনে চলে যায়। সুতরাং এই সকল পথ ধরে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির পক্ষে প্রাচ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু ভারত ও দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য এতই লাভজনক ছিল যে, পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলি তা পরিত্যাগ করতে মোটেই প্রস্তুত ছিলনা।

poat-image

এই অবস্থায় পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলি ও তাদের বনিক ও নাবিকরা ভারত তথা পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে (ইন্দোনেশিয়া, জভী, সুমাত্রা ইত্যাদি) আসবার জন্য নতুন জলপথ আবিস্কার করার চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম পর্তুগালের নাবকি কলম্বাস ভারতে আগমনের জলপথ আবিস্কার করতে বের হয়ে আমেরিকা মহাদেশ আবিস্কার করেন। ১৪৮৭ খ্রিঃ বার্থোলো মিউদিয়াজ নামে এক পর্তুগীজ নাবিক আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিন সীমানায় “উত্তমাশা অন্তরীপ” প্রদক্ষিন করে ভারত আগমনের একটি নতুন জলপথের সন্ধান দেন। এর ১০ বছর পর পর্তুগালের রাজা প্রথম ম্যানুয়াল ভাস্কো-দা-গামার ওপর এই জলপথ আবিস্কারের দায়িত্ব দেন।

poat-image

১৪৯৭ খ্রিস্টাব্দের ৮ জুলাই ভাস্কো -দা- গামা ১৭০ জন নাবিক ও সাঁউ গাব্রিয়েল, সাঁউ রাফায়েল, বেররিও (পরবর্তীতে এর নামকরণ করা হয় সাঁউ মিগুয়েল) নিয়ে টেগাস নদী থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ২৭ জুলাই তারা ভের্দে আর্কিপেলাগো অন্তরীপে পৌঁছান এবং সেখানে ৩দিন যাত্রা শুরু করে বিষুবরেখা পার হয়ে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর থেকে বাঁক নিয়ে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হন। ১৪৯৭ খ্রিস্টাব্দের ৭ নভম্বের জাহাজ উত্তমাশা অন্তরীপের প্রায় ১০০ মাইল উত্তরে সেন্ট হেলেনা ছেড়ে উত্তমাশা অন্তরীপ পার হওয়ার পর প্রতিকূল বায়ুপ্রবাহ এবং বিপরীতে ¯স্রোতে ঠেলে অগ্রসর হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে একারণে এই উপকূলে  সাময়িক যাত্রাবিরতী দেয়া হয়। এরপর ২২ শে নভেম্বর তারা উত্তমাশা অন্তরীপ পার হয়ে মোসলে উপসাগরের একটা দ্বীপে জাহাজ নোঙর করেন।

poat-image

এরপর ৮ই ডিসেম্বর আবার যাত্রা শুরু করেন এবং ২ শে ডিসেম্বর বড়দিনে উপকূলের একটা জায়গায় জাহাজ নোঙর করা হয় এবং ভাস্কো দা গামা এই স্থানের নাম দেন ”টেররা নাটারিয়া” এরপর তারা পূর্ব আফ্রিকার উপকূল ঘেঁষে অগ্রসর হন। ২৫শে জানুয়ারী ১৪৯৮ এ তারা মোজাম্বিকের কাছাকাছি পৌঁছান এবং একটি নিশানা পেদ্রো স্থাপন করেন। এসময় জাহাজের মাঝি মল্লোরা স্বার্ভি রোগে আক্রান্ত হয়। যার কারণে এখানে একমাস যাত্রাবিরতি হয়। এরপর ১৪ই এপ্রিল ভাস্কো -দা- গামার নৌবহর মালিন্দি বন্দরে নোঙর করে এবং ১০ দিন বিশ্রাম করে।

poat-image

এখানেই তার সঙ্গে আহমেদ বিন মজিদ নামক একজন নাবিক এর সাথে পরিচয় হয় যিনি মৌসুমী বায়ুর গতিবিধি এবং আকাশের তারা দেখে নৌচালনায় পারদর্শী ছিলেন এবং যিনি ভারতের বাণিজ্যনগরী কালিকটেও গিয়েছেন। ভাস্কো -দা- গামা তার অভিযান সফল করার জন্য তাকে সঙ্গে নিলেন।

২৮শে এপ্রিল তারা ভারত মহাসাগর পাড়ি দেয়ার জন্য জাহাজ ছাড়েন এবং ২৮শে মে তিনি ভারতের কালিকট বন্দরে এসে পৌঁছান এবং তার ভারতে পৌঁছার স্বাক্ষর হিসেবে একটি পেদ্রো স্থাপন করেন।

এভাবেই ভাস্কো -দা- গামা ভারতের আগমনের জলপথ আকিস্কার করেন।

আপনি কি সাহায্য পেয়েছেন

সকল মন্তব্য

মন্তব্য করতে লগইন করুন নিবন্ধন করুন